প্রথম দুইম্যাচ শেষে ১-১ সমতায় ছিল চলতি ইংল্যান্ড-ভারত ওডিআই সিরিজ। প্রথম ম্যাচে ভারতের জয় ছিল দশ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে মাঝারি মানের স্কোর গড়েও বোলারদের দাপটে ভারতের বিরুদ্ধ ১০০ রানের জয় পায় ইংল্যান্ড। তৃতীয় ম্যাচে সমানতালে লড়েও শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের হার মূলত: অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার পারফর্মেন্সের কাছেই। ইংল্যান্ডের ইনিংসে মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন প্রথমেই ৪ উইকেট নিয়ে। বড় স্কোর পেতে ব্যার্থ হয় ইংল্যান্ড একারণেই। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনঠাসা ভারতকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান বিধ্বংসী ব্যাটিং করে। হার্দিকের ৫৫ বলে ১০টি চার সহকারে ৭১ রানের ক্যামিওর কাছে পথ হারায় ইংল্যান্ড।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জনি বেয়ারস্টো ও জো রুটকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ সিরাজ। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ সাফল্যের রূপকার এই দুইজনই। শুরুর এই ধাক্কা আর সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি।
যদিও ঘুরে দাড়ানোর কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন ওপেনার জেসন রয় অধিনায়ক বেন ষ্টোককে নিয়ে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৭টি চার সহ ৪১ রান করেন রয়। বেন ষ্টোক করেন ২৯ বলে ২৭ রান। দুইজনের পার্টনারশীপ যখন বড় হচ্ছিল তখনই পান্ডিয়া ফিরিয়ে দেন দুইজনকেই অল্প ব্যবধানে।
জস বাটলার অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকটা স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবেই। উইকেটে এসে কিছুটা ধরে খেলতে শুরু করেন। মইন আলী ও লিয়াম লিভিংষ্টোনকে নিয়ে দুটি কার্যকর ইনিংস গড়েন মিডল অর্ডারে।
প্রথমে মইন আলীকে নিয়ে ৭৫ রানের পার্টনারশীপ গড়েন বাটলার। ৪৪ বলে ৩৪ রান করেন মইন। দুটি করে চার ও ছয় ছিল তাতে। ২৭.২ বলে মইন আলী যখন ফিরে যান ইংল্যান্ডের রান তখন ৫ উইকেটে ১৪৯।
জস বাটলারের সাথে লিয়াম লিভিংষ্টোনের পার্টনারশীপ বেশি দূর যেতে পারেনি। তবে উইকেটে
দুইজন যতক্ষণ ছিলেন মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডের স্কোর তিনশ ছাড়িয়ে যাবে। পান্ডিয়াকে দুটি বিশাল ছক্কা হাকান লিয়াম। তবে শেষ পর্যন্ত হার মানেন পান্ডিয়ার কাছেই। ৩১ বলে ২৭ রানের ইনিংসে দুটি চারও মেরেছেন লিয়াম।
লিয়াম আউট হয়েছিলেন ১৯৮ রানে। জস বাটলার উইকেটে থাকায় ইংল্যান্ডের কিছুটা আশা তখনো ছিল। কিন্তু ১৯৯ রানেই জস ফিরে গেলে ইংল্যান্ডের বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা রহিত হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬০ রান এসেছে বাটলারের ব্যাট থেকে। ৮০ বলের ধীরগতির এই ইনিংসে তিনটি চার ও দুটি ছক্কা মেরেছেন বাটলার।
শেষ দিকে ডেভিড উইলি ও ক্রেইগ ওভারটন কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললে ইংল্যান্ডের ইনিংসের স্ফীতি ২৫৯ রানের হয়।
আরও পড়ুন: ক্যান্সারকে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলা এক যুবরাজ
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তুখোড় ফর্মের কারনে এই রান নিরাপদ টার্গেট ছিল না। তবুও ভারতীয় ইনিংসের প্রথম তিনটি উইকেট তুলে দ্রুত তুলে নেন ইংল্যান্ডের নবীন পেসার টপলি। রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলী ফিরে যান দলীয় ৩৮ রানের মধ্যেই।
তবে ইংল্যান্ডের জস বাটলারের ন্যায় ভারতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ান রিষভ প্যান্ট। শুরুতে খুবই রক্ষনাত্মক ভূমিকায় ছিলেন প্যান্ট। অন্য প্রান্ত হার্দিক পান্ডিয়া পাল্টা আক্রমনে যান। দ্রুত কিছু চার ছক্কায় ইংল্যান্ডের বোলারদের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দেন।
ছয় নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৫ বলে ৭১ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস উপহার দেন হার্দিক। ১০টি চার মেরেছেন তিনি। তবে সাবধানী ব্যাটিংয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে মারেননি একবারও। ছক্কা ছাড়াই হার্দিকের এই ইনিংস দলে তাঁর পাকাপোক্ত স্থানকেই মূল্যায়ন করে।
আরও পড়ুন: ভারতকে হতাশায় ডুবাল নিউজিল্যান্ড
পান্ডিয়ার বিদায়ে ক্রিজে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। ততক্ষণে রিষভ প্যান্ট হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন। ইনিংসের ৪২ তম ওভারে ডেভিড উইলির এক ওভারে টানা পাঁচটি চার মেরেছেন প্যান্ট। শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ১২৫ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রিষভ। দুই ছক্কার তিনি মেরেছেন ১৬টি চার।
২৪ রানে ৪ উইকেট ও ৫৫ বলে ৭১ রানের কার্যকর ব্যাটিংয়ের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচের বড় দাবীদার ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু গুরুত্ব বিচারে রিষভ প্যান্টের ইনিংসকেই এগিয়ে রাখেন ম্যাচ এডজুডিকেটররা। তাই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার লাভ করেন রিষভ প্যান্ট।
ভারত বনাম ইংল্যান্ড ক্রিকেট লড়াই সব সময় জমজমাট লড়াইয়ের আভাস দেয়। ইংল্যান্ডের মাঠিতে এবার সিরিজটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপের বিরুদ্ধে হোম কন্ডিশনে ইংল্যান্ডের বোলারদের লড়াই দেখার প্রতিক্ষায় ছিলেন দর্শকরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয় হয়েছে পরিচ্ছন্ন ক্রিকেট লড়াইয়ের। যেখানে ভারতের উন্নত ক্রীড়াশৈলীর কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল একদিনের ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলকে।